পর্যটন শিক্ষা: যে তথ্যগুলো না জানলে আপনি পিছিয়ে পড়বেন

webmaster

관광 교육 - **Prompt:** A diverse group of young adult students, both male and female, are actively engaged in a...

আরে ভাইবোনেরা! কেমন আছেন সবাই? জানি, আজকাল সবার মনেই একটা ঘোরার পোকা কিলবিল করছে। নতুন নতুন জায়গা দেখা, নতুন সংস্কৃতিকে জানা – এর মজাই আলাদা, তাই না?

কিন্তু আপনারা কি কখনো ভেবে দেখেছেন, এই যে আমাদের ভ্রমণ অভিজ্ঞতাগুলো এত সুন্দর আর মসৃণ হয়, এর পেছনে কারা কাজ করেন? শুধুমাত্র ঘুরতে যাওয়াটা যেমন আনন্দের, ঠিক তেমনই এই ভ্রমণ শিল্পকে সঠিকভাবে গড়ে তোলাটাও কিন্তু কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। বিশেষ করে আজকালকার দিনে, যখন ভ্রমণ মানে শুধু পাসপোর্ট আর টিকিট নয়, পরিবেশ রক্ষা থেকে শুরু করে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার পর্যন্ত কত কিছু!

অনেকেই ভাবেন, ট্যুরিজম মানে শুধু গাইড হওয়া বা হোটেল ম্যানেজ করা। কিন্তু বিশ্বাস করুন, এই ক্ষেত্রটা এখন অনেক বড়, অনেক গভীর। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলে, এখানে সফল হতে গেলে শুধু প্যাশন থাকলেই হয় না, দরকার সঠিক শিক্ষা আর দক্ষতা। ডিজিটাল দুনিয়ায় আমরা যেমন এখন ঘরে বসেই বিশ্বের খবর রাখি, ঠিক তেমনই পর্যটন শিক্ষাও এখন আর পুরনো ছকে বাঁধা নেই। ভবিষ্যৎ কেমন হবে, আর আমরা কীভাবে তার জন্য তৈরি হবো, সেটা জানাটা খুব জরুরি। এই বিশাল আর ক্রমবর্ধমান শিল্পে নিজেদের জায়গা করে নিতে হলে কী কী জানতে হবে, বা কোন দিকগুলোয় নজর দিতে হবে, সেসব নিয়েই আজ আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব। চলুন, নিচের লেখায় এই বিষয়ে আরও গভীরে যাওয়া যাক।

ভ্রমণ শিল্পে সফলতার চাবিকাঠি: কেবল ঘুরতে যাওয়া নয়, জ্ঞান অর্জনও জরুরি

관광 교육 - **Prompt:** A diverse group of young adult students, both male and female, are actively engaged in a...

আরে ভাইবোনেরা, আপনাদের সঙ্গে একটা গল্প শেয়ার করি। আমার ছোটবেলা থেকেই ঘুরতে যাওয়ার একটা দারুণ নেশা ছিল। কিন্তু যখন এই পেশায় এলাম, তখন বুঝলাম শুধু ঘোরার আনন্দটাই সব নয়, এর পেছনে কতটা গভীর জ্ঞান আর পরিশ্রম থাকে! অনেকেই ভাবেন, ট্যুরিজম মানে শুধু ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়া, কিন্তু বিশ্বাস করুন, এর চেয়েও অনেক বেশি কিছু। একটা সময় ছিল যখন পর্যটন মানে ছিল হাতে গোনা কিছু পেশা – হয় গাইড, নয়তো হোটেল ম্যানেজার। কিন্তু এখন পৃথিবী বদলেছে, আর এই শিল্পটাও তার সাথে তাল মিলিয়ে চলছে। এখন আর শুধু স্থানীয় ভাষা জানা বা সুন্দর করে কথা বলাই যথেষ্ট নয়, পুরো বিশ্বের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে দরকার গভীর জ্ঞান আর প্রখর দক্ষতা। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলে, এখানে টিকে থাকতে হলে আপনাকে শুধু ‘কী’ হচ্ছে তা জানলে চলবে না, ‘কেন’ হচ্ছে এবং ‘কীভাবে’ আরও ভালো করা যায়, সে বিষয়েও স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। আজকের দিনে ট্যুরিজম আর শুধু বিনোদনের বিষয় নয়, এটা একটা বিশাল অর্থনৈতিক ইঞ্জিন, যেখানে পরিবেশ, প্রযুক্তি আর মানবসম্পদ একে অপরের পরিপূরক।

ভ্রমণ শিল্পে নতুন দিগন্ত

এক দশক আগেও ট্যুরিজম নিয়ে মানুষের ধারণা ছিল অনেক সরল। কিন্তু এখন, যখন আমরা ‘টেকসই পর্যটন’ বা ‘দায়িত্বশীল ভ্রমণ’ এর মতো শব্দগুলো শুনি, তখন বোঝা যায় ব্যাপারটা কতটা জটিল আর বিস্তৃত হয়েছে। শুধু মুনাফা অর্জনের দিকে না তাকিয়ে এখন পরিবেশ রক্ষা, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের মতো বিষয়গুলোও সমান গুরুত্ব পাচ্ছে। আমার মনে আছে, একবার সুন্দরবনে ঘুরতে গিয়ে সেখানকার স্থানীয় একজন গাইড বলেছিলেন, “আপনাদের আনন্দ দেওয়ার পাশাপাশি আমাদের দায়িত্ব হলো এই বনকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাঁচিয়ে রাখা।” এই একটা কথা আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছিল। এখনকার পর্যটন কেবল ব্যক্তিগত আনন্দের উৎস নয়, এটি সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং পরিবেশ সুরক্ষার এক দারুণ প্ল্যাটফর্ম। প্রতিটি ভ্রমণের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে নতুন নতুন শেখার সুযোগ।

কেন দরকার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা?

অনেকেই মনে করেন, ট্যুরিজমে সফল হতে ডিগ্রি লাগে না, কেবল অভিজ্ঞতা আর মানুষের সঙ্গে মেশার ক্ষমতা থাকলেই চলে। এই ধারণার সঙ্গে আমি পুরোপুরি একমত নই। অভিজ্ঞতা অবশ্যই জরুরি, কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আপনাকে একটা শক্ত ভিত্তি দেয়। ধরুন, আপনি একটা হোটেল খুলবেন। শুধু ভালো খাবার বা সুন্দর রুম থাকলেই তো হবে না, মার্কেটিং, ফিনান্স, অপারেশনস, কাস্টমার সার্ভিস – সবকিছুই জানতে হবে। আর এই জ্ঞানটা আসে সঠিক শিক্ষা আর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে। আমার পরিচিত একজন বন্ধু আছেন, যিনি ছোটবেলায় শুধু ঘুরে বেড়ানোর নেশায় একটা ছোট ট্র্যাভেল এজেন্সি খুলেছিলেন। শুরুর দিকে বেশ ভালোই চলছিল, কিন্তু যখন ব্যবসাটা বড় হতে শুরু করল, তখন সে বুঝতে পারল প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞানের অভাবে অনেক সিদ্ধান্ত নিতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। পরে সে একটা ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট কোর্স করে এসে তার ব্যবসাকে নতুনভাবে সাজায়। তাই আমি বলি, শিক্ষা হলো সেই জ্বালানি, যা আপনার অভিজ্ঞতার গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেয়।

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় পর্যটন: ডিজিটাল দক্ষতা অপরিহার্য

আজকালকার দিনে একটা কথা খুব শোনা যায়, “ডিজিটাল না হলে তুমি পিছিয়ে পড়বে।” আর এই কথাটা পর্যটন শিল্পের ক্ষেত্রে শতভাগ সত্যি। ভাবুন তো, এখনকার দিনে কে আর টিকিট বা হোটেল বুক করার জন্য এজেন্সির দোকানে যায়? সবাই তো মোবাইল হাতেই সব করে ফেলে, তাই না? আমার নিজের কথাই বলি, এখন আমার বেশিরভাগ ভ্রমণ পরিকল্পনা আর বুকিং সবই হয় অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে। এই যে পরিবর্তনটা এসেছে, এর সঙ্গেই আমাদের মানিয়ে চলতে হবে। শুধু বুকিং নয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা শেয়ার করা, বিভিন্ন ব্লগ বা ইউটিউব চ্যানেলে কন্টেন্ট তৈরি করা – সবকিছুর সঙ্গেই জড়িয়ে আছে ডিজিটাল দক্ষতা। আপনি যদি ভাবেন শুধু সুন্দর মুখ আর ভালো কথা দিয়েই এই ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকবেন, তাহলে ভুল করবেন। কারণ আজকাল ডিজিটাল বিশ্বে কাস্টমাররা অনেক স্মার্ট। তারা আপনার সার্ভিস সম্পর্কে জানতে চায়, ছবি দেখতে চায়, রিভিউ পড়তে চায়। তাই ডিজিটাল দক্ষতা ছাড়া আপনি যেন একটা পাখা ছাড়া পাখির মতো – উড়তে চাইলেও পারবেন না।

অনলাইন প্ল্যাটফর্মে দক্ষতা

বর্তমানে, পর্যটন শিল্পের অন্যতম চালিকাশক্তি হলো অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। আপনি Airbnb, Booking.com, TripAdvisor এর মতো সাইটগুলো দেখলেই বুঝতে পারবেন, কীভাবে প্রযুক্তি মানুষের ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকে সহজ করে দিয়েছে। একজন সফল ট্যুরিজম পেশাদার হিসেবে আপনার এই প্ল্যাটফর্মগুলো সম্পর্কে গভীর জ্ঞান থাকা অপরিহার্য। কীভাবে একটি আকর্ষণীয় লিস্টিং তৈরি করতে হয়, কীভাবে সঠিক কিওয়ার্ড ব্যবহার করে আপনার অফারকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হয়, বা কীভাবে গ্রাহকদের রিভিউ ম্যানেজ করতে হয় – এই বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একবার আমার এক পরিচিত ছোট হোটেল মালিক অনলাইন মার্কেটিংয়ের গুরুত্ব না বুঝে তার পুরনো পদ্ধতিতেই ব্যবসা চালাচ্ছিলেন। কিছুদিন পর দেখলাম তার হোটেলে অতিথি আসা অনেক কমে গেছে। আমি তাকে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম আর গুগল বিজনেসে তার হোটেলের প্রোফাইল তৈরি করতে শেখালাম। কিছুদিনের মধ্যেই তার বুকিং এতটাই বাড়লো যে তিনি আমাকে ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি। এই পরিবর্তনটা এসেছে কেবল সঠিক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের দক্ষতার মাধ্যমেই।

ডেটা অ্যানালাইসিস এবং গ্রাহক সম্পর্ক

আচ্ছা, আপনারা কি কখনো ভেবে দেখেছেন, এই যে বিভিন্ন ট্র্যাভেল ওয়েবসাইটগুলো আপনাকে আপনার পছন্দ অনুযায়ী অফার দেখায়, এটা কীভাবে করে? হ্যাঁ, এর পেছনে থাকে ডেটা অ্যানালাইসিস। গ্রাহকদের রুচি, পছন্দ, ভ্রমণের অভ্যাস – এই সব ডেটা সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করা হয়। যারা এই কাজগুলো বোঝেন, তারা কিন্তু পর্যটন শিল্পে বেশ ভালো অবস্থানে আছেন। শুধু ডেটা অ্যানালাইসিস নয়, গ্রাহক সম্পর্ক ব্যবস্থাপনাও (CRM) আজকাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একবার যারা আপনার সার্ভিস নিয়েছেন, তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা, নতুন অফার সম্পর্কে জানানো, তাদের ফিডব্যাক নেওয়া – এই কাজগুলো একজন গ্রাহককে আপনার প্রতি আরও বেশি বিশ্বস্ত করে তোলে। আমি নিজে যখন কোনো ট্র্যাভেল কোম্পানির কাছ থেকে ব্যক্তিগতভাবে কাস্টমাইজড অফার পাই, তখন মনে হয় তারা আমার কথা ভাবছে। এই ভাবনাটাই একজন গ্রাহকের মনে একটা গভীর সম্পর্ক তৈরি করে, যা ব্যবসার জন্য খুবই জরুরি।

Advertisement

টেকসই পর্যটন: পরিবেশবান্ধব ভবিষ্যৎ গড়ার অঙ্গীকার

আমার মনে আছে, একবার সেন্ট মার্টিনে ঘুরতে গিয়েছিলাম। অসাধারণ সুন্দর জায়গা! কিন্তু ফেরার পথে দেখলাম সৈকত জুড়ে প্লাস্টিকের বোতল আর খাবারের প্যাকেট ছড়ানো। মনটা সত্যিই খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তখন থেকেই টেকসই পর্যটন নিয়ে আমার ভাবনা শুরু। এই যে আমরা ঘুরতে যাই, নতুন জায়গা দেখি, এর মানে তো এই নয় যে আমরা সেখানকার পরিবেশ বা সংস্কৃতিকে নষ্ট করে আসব, তাই না? টেকসই পর্যটন মানে হলো এমনভাবে ভ্রমণ করা, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও এই সৌন্দর্য টিকে থাকে। এর মধ্যে পরিবেশ রক্ষা যেমন আছে, তেমনি স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং তাদের সংস্কৃতিকে সম্মান জানানোও আছে। এটা কেবল একটা নীতি নয়, এটা আমাদের সবার নৈতিক দায়িত্ব। একজন সচেতন ভ্রমণকারী হিসেবে আমরা প্রত্যেকেই এই পরিবর্তনে অংশ নিতে পারি।

পরিবেশ সুরক্ষায় আমাদের ভূমিকা

পরিবেশ রক্ষা এখন আর শুধু সরকারের বা বড় বড় সংস্থার কাজ নয়, এটা আমাদের প্রত্যেকের ব্যক্তিগত দায়িত্ব। পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের তো বটেই, এমনকি একজন সাধারণ ভ্রমণকারী হিসেবেও আমাদের অনেক কিছু করার আছে। প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো, যত্রতত্র ময়লা না ফেলা, স্থানীয় পরিবেশের ক্ষতি না করা – এই ছোট ছোট বিষয়গুলোও অনেক বড় পরিবর্তন আনতে পারে। আমি যখন কোথাও ঘুরতে যাই, তখন নিজের সাথে একটি পানির বোতল রাখি, যাতে বারবার প্লাস্টিকের বোতল কিনতে না হয়। আবার, রিসর্ট বা হোটেলে থাকার সময় খেয়াল করি যেন অযথা বিদ্যুতের অপচয় না হয়। ভাবুন তো, আমরা যদি সবাই এইভাবে ছোট ছোট পদক্ষেপ নিই, তাহলে আমাদের প্রিয় ভ্রমণ গন্তব্যগুলো কতটা সুন্দর আর পরিচ্ছন্ন থাকবে! এই সচেতনতা এখন পর্যটন শিক্ষার একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে।

স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ

আমরা যখন কোনো নতুন জায়গায় যাই, তখন সেখানকার মানুষ, তাদের জীবনযাত্রা, তাদের সংস্কৃতি – এই সবকিছুই আমাদের মুগ্ধ করে। এই অভিজ্ঞতাগুলোই তো ভ্রমণের আসল সৌন্দর্য, তাই না? টেকসই পর্যটনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সংরক্ষণ। এর মানে হলো, আমরা এমনভাবে ভ্রমণ করব যাতে স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রায় কোনো নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে। তাদের ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্পকে উৎসাহিত করা, তাদের লোকনৃত্য বা গান উপভোগ করা, তাদের স্থানীয় খাবার চেখে দেখা – এই সবকিছুই তাদের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করে। একবার আমি বান্দরবানে গিয়েছিলাম। সেখানকার আদিবাসী গোষ্ঠীর হাতের তৈরি জিনিসপত্র দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। তাদের কাছ থেকে জিনিস কিনেছিলাম এবং তাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে জেনেছিলাম। এই ধরনের অভিজ্ঞতা শুধু আমাদের ভ্রমণকে অর্থবহ করে তোলে না, বরং স্থানীয় সংস্কৃতি সংরক্ষণেও আমাদের ভূমিকা রাখে।

ভাষাগত দক্ষতা ও সাংস্কৃতিক বোঝাপড়া: সফলতার অন্যতম সিঁড়ি

আমরা বাঙালিরা যখন ভারতের বাইরে বা ইউরোপে ঘুরতে যাই, তখন একটু হলেও তো ভাষার সমস্যা হয়, তাই না? ইংরেজিতে কাজ চলে গেলেও, যখন স্থানীয় ভাষায় দু-একটা কথা বলতে পারি, তখন সেখানকার মানুষজনের মুখে যে হাসি দেখি, সেটার মূল্য অনেক। এই অভিজ্ঞতাটা আমার নিজের আছে। একবার থাইল্যান্ডে গিয়ে স্থানীয় ভাষায় ‘ধন্যবাদ’ বলায় সেখানকার দোকানি এতটাই খুশি হয়েছিলেন যে আমাকে কিছু ফল উপহার দিয়েছিলেন। এই যে ভাষার মাধ্যমে একটা সংযোগ তৈরি হয়, এর গুরুত্ব পর্যটন শিল্পে অপরিসীম। শুধু ভাষার জ্ঞান নয়, সেই দেশের বা অঞ্চলের সংস্কৃতি সম্পর্কে একটা প্রাথমিক ধারণা রাখাও জরুরি। কারণ সাংস্কৃতিক ভুল বোঝাবুঝি অনেক সময় বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। একজন সফল ট্যুরিজম পেশাদার হিসেবে আপনার বহুভাষী হওয়া এবং বিভিন্ন সংস্কৃতিকে বোঝার ক্ষমতা থাকাটা আপনাকে অন্যদের থেকে এগিয়ে রাখবে।

বহুভাষী হয়ে ওঠার গুরুত্ব

পর্যটন শিল্পে ভাষার ভূমিকা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। পর্যটকরা বিভিন্ন দেশ থেকে আসেন, তাদের প্রত্যেকের ভাষা আলাদা। আপনি যদি তাদের ভাষায় কিছু কথা বলতে পারেন, তাহলে তাদের সঙ্গে আপনার একটা আন্তরিক সম্পর্ক তৈরি হয়। এটা কেবল একজন গাইড বা হোটেল ম্যানেজারের জন্য নয়, ট্র্যাভেল ব্লগার বা কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের জন্যও জরুরি। যখন আপনি একটি বিদেশি ভাষায় কোনো গন্তব্য সম্পর্কে লেখেন বা ভিডিও তৈরি করেন, তখন তা সেই ভাষার মানুষদের কাছে পৌঁছানোর সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। আমার পরিচিত একজন ট্যুর অপারেটর আছেন, যিনি বাংলা ছাড়াও হিন্দি, ইংরেজি এবং ফরাসি ভাষায় কথা বলতে পারেন। তার এই দক্ষতার কারণে তিনি বিদেশি পর্যটকদের কাছে খুব জনপ্রিয়। তিনি নিজেই বলেন, “যখন আমি তাদের ভাষায় কথা বলি, তখন তারা মনে করে আমি তাদেরই একজন।”

ভিন্ন সংস্কৃতিকে সম্মান জানানো

ভ্রমণের সবচেয়ে সুন্দর দিকটা হলো নতুন সংস্কৃতিকে জানা এবং তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। প্রত্যেক দেশের নিজস্ব আচার-অনুষ্ঠান, খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রা আছে। আমরা যখন কোথাও যাই, তখন আমাদের উচিত সেই সংস্কৃতিকে সম্মান জানানো। ধরুন, কোনো মুসলিম প্রধান দেশে গিয়ে আপনি প্রকাশ্যে মদ পান করলেন, অথবা কোনো মন্দিরে জুতো পরে প্রবেশ করলেন – এটা কিন্তু সেই সংস্কৃতির প্রতি অসম্মান দেখানো। এই ছোট ছোট বিষয়গুলো জানা এবং মেনে চলা একজন দায়িত্বশীল ভ্রমণকারীর পরিচয়। পর্যটন শিক্ষায় এই সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতার উপর অনেক জোর দেওয়া হয়। কারণ পর্যটন কেবল অর্থ উপার্জনের মাধ্যম নয়, এটি হলো বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরির একটি প্রক্রিয়া। আমরা যখন অন্যদের সংস্কৃতিকে শ্রদ্ধা করি, তখন তারাও আমাদের সংস্কৃতিকে জানতে আগ্রহী হয়।

Advertisement

কর্মসংস্থানের নতুন ক্ষেত্র: প্রচলিত ধারণার বাইরে

관광 교육 - **Prompt:** A picturesque scene showcasing sustainable tourism in a vibrant, natural village environ...

আগে মানুষ যখন ট্যুরিজম নিয়ে পড়াশোনা করত, তখন ভাবত, হয়তো কোনো হোটেলে চাকরি হবে, বা কোনো ট্র্যাভেল এজেন্সিতে টিকিট বুকিংয়ের কাজ। কিন্তু এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা। এই শিল্পটা এতটাই বিস্তৃত হয়েছে যে এখানে হাজারো নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা আমাদের প্রচলিত ধারণার বাইরে। আমার নিজের চোখে দেখা, এমন অনেক তরুণ-তরুণী আছেন যারা ট্যুরিজম নিয়ে এমন সব কাজ করছেন, যা ১০ বছর আগেও কেউ ভাবতেও পারেনি। যেমন ধরুন, ইকো-ট্যুরিজম বিশেষজ্ঞ, অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম অপারেটর, ট্র্যাভেল কন্টেন্ট ক্রিয়েটর, ডেস্টিনেশন মার্কেটার – এই সব পদগুলো এখন অনেক বেশি চাহিদা সম্পন্ন। এই ক্ষেত্রগুলো কেবল অর্থের দিক থেকেই লাভজনক নয়, আপনাকে দারুণ কিছু অভিজ্ঞতাও দেবে।

স্টার্টআপ এবং উদ্যোক্তা তৈরি

পর্যটন শিল্প এখন তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য একটা দারুণ জায়গা। যাদের মনে নতুন কিছু করার স্বপ্ন আছে, তারা এখানে নিজেদের স্টার্টআপ শুরু করতে পারেন। আমার একজন কলেজ বন্ধু ছিল, যে কিনা সবসময়ই একটু অন্যরকম কিছু করতে চাইত। সে এখন ‘রুরাল ট্যুরিজম’ নিয়ে কাজ করছে। সে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে পর্যটকদের নিয়ে যায়, যেখানে তারা স্থানীয়দের সঙ্গে মিশে তাদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানতে পারে। তার এই উদ্যোগটা এতটাই সফল হয়েছে যে সে এখন অনেক মানুষকে কর্মসংস্থানও দিতে পেরেছে। এটা কেবল একটি উদাহরণ। আপনি যদি একটু মাথা খাটান, তাহলে ট্যুরিজমের এমন অনেক অজানা দিক খুঁজে পাবেন, যেখানে আপনি নিজের মতো করে একটা ব্যবসা দাঁড় করাতে পারবেন। এর জন্য দরকার কেবল আইডিয়া, প্যাশন আর একটু সাহস।

বিশেষজ্ঞ পরামর্শদাতা হিসেবে সুযোগ

আপনার যদি পর্যটন শিল্প সম্পর্কে গভীর জ্ঞান থাকে এবং আপনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন, তাহলে আপনি একজন বিশেষজ্ঞ পরামর্শদাতা হিসেবেও কাজ করতে পারেন। বিভিন্ন হোটেল, রিসর্ট, ট্র্যাভেল এজেন্সি বা এমনকি সরকারও অনেক সময় পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ চায়। আপনি তাদের কাছে নতুন নতুন আইডিয়া দিতে পারেন, বিপণন কৌশল তৈরি করে দিতে পারেন, অথবা টেকসই পর্যটন মডেল তৈরিতে সাহায্য করতে পারেন। আমার পরিচিত একজন আছেন, যিনি আগে একটি বড় ট্র্যাভেল এজেন্সিতে কাজ করতেন। এখন তিনি স্বাধীনভাবে বিভিন্ন ছোট ছোট ট্র্যাভেল কোম্পানিকে কনসাল্টেন্সি সার্ভিস দেন। তার এই কাজটা বেশ চ্যালেঞ্জিং হলেও দারুণ উপভোগ্য এবং যথেষ্ট লাভজনকও বটে। তাই আপনার যদি অভিজ্ঞতা আর জ্ঞান থাকে, তাহলে এই ক্ষেত্রটা আপনার জন্য উন্মুক্ত।

পর্যটন শিক্ষায় আধুনিক পাঠক্রম: কী শিখব, কীভাবে শিখব?

পর্যটন শিক্ষা এখন আর পুরনো বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ নেই। পৃথিবী যেভাবে দ্রুত বদলে যাচ্ছে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষার পাঠক্রমও নতুন করে সাজানো হচ্ছে। এখন শুধু থিওরি পড়ানো হয় না, হাতে-কলমে কাজ শেখানো হয়, বাস্তব জীবনের সমস্যা সমাধানের কৌশল শেখানো হয়। আমার মনে আছে, আমার শিক্ষাজীবনে আমরা কেবল বই পড়তাম। কিন্তু আজকালকার ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন ট্যুরিস্ট স্পটে গিয়ে সরাসরি কাজ করে, অভিজ্ঞতা অর্জন করে। এটা একটা দারুণ ব্যাপার, কারণ এতে তারা কেবল তাত্ত্বিক জ্ঞানই অর্জন করে না, ব্যবহারিক জ্ঞানও পায়, যা তাদের ভবিষ্যৎ কর্মজীবনে অনেক সাহায্য করে। এই আধুনিক পাঠক্রমগুলো আপনাকে এমনভাবে তৈরি করবে, যাতে আপনি ভবিষ্যতের যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারেন।

অভিজ্ঞতাভিত্তিক শেখার গুরুত্ব

অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিক্ষা মানে হলো, কেবল ক্লাসের লেকচার শুনে শেখা নয়, বরং হাতে-কলমে কাজ করে শেখা। পর্যটন শিল্পে এটা খুবই জরুরি। ধরুন, আপনি হোটেল ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়ছেন। আপনাকে কেবল হোটেল পরিচালনার নিয়মকানুন শেখানো হবে না, আপনাকে সরাসরি কোনো হোটেলে ইন্টার্নশিপ করতে পাঠানো হবে, যাতে আপনি সেখানকার কাজগুলো নিজে করে শিখতে পারেন। এতে আপনি কেবল দক্ষতা অর্জন করবেন না, বরং বাস্তব জীবনে কীভাবে বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়, সেটাও শিখবেন। আমার মনে আছে, আমি যখন প্রথম একটা ট্র্যাভেল এজেন্সিতে কাজ শুরু করেছিলাম, তখন বইয়ের জ্ঞান আর বাস্তব কাজের মধ্যে অনেক পার্থক্য দেখতে পেয়েছিলাম। অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিক্ষা এই পার্থক্যটা কমিয়ে আনে এবং আপনাকে আরও বেশি প্রস্তুত করে তোলে।

বৈশ্বিক মানদণ্ড মেনে চলা

পর্যটন শিল্প এখন একটি বৈশ্বিক শিল্প। তাই এখানকার শিক্ষার মানদণ্ডও বৈশ্বিক হওয়া উচিত। আপনি যদি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোনো কোর্স করেন, তাহলে আপনার দক্ষতা কেবল আপনার দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং বিশ্বের যেকোনো জায়গায় আপনার কাজের সুযোগ তৈরি হবে। আন্তর্জাতিক ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশন (WTTCC) বা UNWTO-এর মতো সংস্থাগুলো বিভিন্ন দেশের পর্যটন শিক্ষায় বৈশ্বিক মানদণ্ড বজায় রাখতে সাহায্য করে। এই মানদণ্ডগুলো মেনে চললে আপনি যেমন বিশ্বের সেরা জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন, তেমনি আপনার কর্মজীবনের সুযোগও অনেক বেড়ে যাবে। তাই, পড়ার বিষয় এবং প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের সময় এই বৈশ্বিক মানদণ্ডগুলোর দিকে নজর রাখাটা খুবই জরুরি।

বিষয় ঐতিহ্যবাহী দক্ষতা আধুনিক দক্ষতা
পর্যটন ক্ষেত্র হোটেল ব্যবস্থাপনা, গাইড সার্ভিস, টিকিট বুকিং ডিজিটাল মার্কেটিং, ডেটা অ্যানালাইসিস, টেকসই পর্যটন ব্যবস্থাপনা, ই-কমার্স
প্রয়োজনীয় গুণাবলী ভাষাগত জ্ঞান, স্থানীয় পরিচিতি, অতিথি আপ্যায়ন প্রযুক্তি জ্ঞান, সমস্যা সমাধান, উদ্ভাবনী চিন্তা, সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতা
ক্যারিয়ারের সুযোগ প্রচলিত ট্যুর অপারেটর, হোটেল স্টাফ অনলাইন ট্র্যাভেল এজেন্সি, ইকো-ট্যুরিজম এক্সপার্ট, ট্র্যাভেল ব্লগার, কন্টেন্ট ক্রিয়েটর
Advertisement

ভবিষ্যৎ পর্যটন: চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ

ভবিষ্যৎ পর্যটন কেমন হবে, তা নিয়ে আমাদের অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ভার্চুয়াল রিয়ালিটি – এই সব নতুন প্রযুক্তি আমাদের ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকে কীভাবে প্রভাবিত করবে? একদিকে যেমন নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে তেমনি নতুন নতুন সুযোগও তৈরি হচ্ছে। আমার মনে হয়, যারা এই পরিবর্তনগুলোকে গ্রহণ করতে পারবে এবং নিজেদের সেভাবে তৈরি করতে পারবে, তারাই ভবিষ্যতে সফল হবে। এই শিল্পটা যেমন উত্তেজনাপূর্ণ, তেমনি দ্রুত পরিবর্তনশীল। তাই এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলাটা খুবই জরুরি। আমাদের শুধু বর্তমান নিয়ে ভাবলে চলবে না, ভবিষ্যতের দিকেও নজর রাখতে হবে এবং সেই অনুযায়ী নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও স্বয়ংক্রিয়তার প্রভাব

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং স্বয়ংক্রিয়তা (Automation) এখন আর সায়েন্স ফিকশনের বিষয় নয়, এগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। পর্যটন শিল্পেও এর প্রভাব ব্যাপক। ধরুন, কোনো হোটেলের চেক-ইন প্রক্রিয়া এখন রোবট বা স্বয়ংক্রিয় সিস্টেমের মাধ্যমে হচ্ছে, অথবা আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনা তৈরি করে দিচ্ছে কোনো এআই চ্যাটবট। এই পরিবর্তনগুলো কিছু প্রচলিত চাকরির ক্ষেত্রকে হয়তো প্রভাবিত করবে, কিন্তু একই সঙ্গে নতুন নতুন চাকরির সুযোগও তৈরি করবে। যেমন, যারা এআই সিস্টেম ডেভেলপ করতে পারে, বা যারা এই প্রযুক্তিগুলোকে পর্যটন শিল্পে প্রয়োগ করতে পারে, তাদের চাহিদা অনেক বাড়বে। আমার পরিচিত এক ট্র্যাভেল কোম্পানি এখন এআই ব্যবহার করে গ্রাহকদের জন্য ব্যক্তিগতকৃত ভ্রমণ প্যাকেজ তৈরি করে, যা গ্রাহকদের কাছে দারুণ জনপ্রিয় হয়েছে। তাই এই প্রযুক্তিগুলোকে ভয় না পেয়ে বরং কীভাবে কাজে লাগানো যায়, সেদিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।

সংকট মোকাবিলায় প্রস্তুতি

গত কয়েক বছরে আমরা দেখেছি, কীভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বিশ্বব্যাপী মহামারী পর্যটন শিল্পকে এক নিমেষেই স্থবির করে দিতে পারে। এই ধরনের সংকট মোকাবিলায় প্রস্তুতি থাকাটা এখন পর্যটন শিক্ষার একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, সংকটকালীন যোগাযোগ এবং পুনরুদ্ধার কৌশল – এই বিষয়গুলো এখন শেখানো হয়। ভবিষ্যতে আরও অনেক অপ্রত্যাশিত সংকট আসতে পারে, আর সেগুলোর জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। আমার নিজের অভিজ্ঞতা বলে, যখন কোনো সংকট আসে, তখন যারা আগে থেকে প্রস্তুত থাকে, তারাই সবচেয়ে ভালোভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারে। তাই শুধু সুন্দর পরিকল্পনা নয়, বরং খারাপ পরিস্থিতির জন্য একটা ব্যাকআপ প্ল্যান থাকাও জরুরি।

글을 শেষ করছি

আরে ভাই ও বোনেরা, আমার মনে হয় আপনারা বুঝতে পারছেন, ভ্রমণ শিল্পটা আসলে কতটা বিশাল আর কত বৈচিত্র্যময়! শুধু আনন্দ আর ঘোরাঘুরিই নয়, এর পেছনে কাজ করে গভীর জ্ঞান, দক্ষতা আর একটা দারুণ প্যাশন। আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, যারা এই শিল্পের গভীরে ঢুকতে চায়, নতুন কিছু শিখতে চায়, তারাই আসলে সফল হয়। আমার মনে আছে, প্রথম যখন এই পেশায় এসেছিলাম, তখন সবকিছু কেমন যেন ধোঁয়াশা লাগত। কিন্তু ধীরে ধীরে যখন শিখতে শুরু করলাম, নতুন প্রযুক্তি আর টেকসই পর্যটন নিয়ে জানতে পারলাম, তখন আমার দৃষ্টিভঙ্গিই বদলে গেল। তাই আপনাদের কাছে আমার একটাই অনুরোধ, যদি এই ক্ষেত্রে সফল হতে চান, তাহলে শুধু ঘুরতে যাওয়ার স্বপ্ন না দেখে জ্ঞান অর্জনের পেছনেও ছুটুন। কারণ এই শিল্পে টিকে থাকার জন্য শেখার কোনো শেষ নেই।

Advertisement

কিছু দরকারী তথ্য যা আপনার জানা উচিত

১. সঠিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ: পর্যটন শিল্পে সফলতার জন্য শুধুমাত্র ব্যক্তিগত আগ্রহ যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন হয় সুনির্দিষ্ট প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের। এটি আপনাকে এই শিল্পের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে গভীরভাবে জানতে সাহায্য করবে এবং আপনার দক্ষতাকে শাণিত করবে।

২. ডিজিটাল দক্ষতা অর্জন: বর্তমান যুগে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম। অনলাইন মার্কেটিং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার, ডেটা অ্যানালাইসিস এবং ই-কমার্স সম্পর্কে জ্ঞান আপনাকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রাখবে এবং নতুন সুযোগ তৈরি করবে।

৩. টেকসই পর্যটনে মনোযোগ: পরিবেশ রক্ষা, স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা এবং দায়িত্বশীল ভ্রমণ অনুশীলন করা এখন আর শুধু একটি নৈতিক দায়িত্ব নয়, এটি একটি ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয় ব্যবসায়িক মডেল, যা দীর্ঘমেয়াদী সফলতা এনে দিতে পারে।

৪. ভাষাগত দক্ষতা ও সাংস্কৃতিক বোঝাপড়া: বহুভাষী হওয়া এবং বিভিন্ন সংস্কৃতির প্রতি সংবেদনশীলতা আপনাকে আন্তর্জাতিক পর্যটকদের সাথে আরও ভালোভাবে যোগাযোগ করতে সাহায্য করবে। এটি শুধু সম্পর্ক গড়তে নয়, বরং ব্যবসার প্রসারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

৫. উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ: প্রচলিত চাকরির ধারণার বাইরে এসে ইকো-ট্যুরিজম, অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম বা বিশেষায়িত কন্টেন্ট ক্রিয়েশনের মতো নতুন ক্ষেত্রে নিজেদের স্টার্টআপ শুরু করার বিশাল সুযোগ রয়েছে। এর জন্য দরকার সৃজনশীলতা আর ঝুঁকি নেওয়ার সাহস।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির সারসংক্ষেপ

আজকের দিনে পর্যটন শিল্প কেবল বিনোদন বা ভ্রমণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, এটি একটি বহুমুখী ক্ষেত্র যেখানে দক্ষতা, জ্ঞান এবং আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ অত্যাবশ্যক। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, ডিজিটাল দক্ষতা, টেকসই অনুশীলন, এবং ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বোঝাপড়া – এই পাঁচটি স্তম্ভই একজন সফল পর্যটন পেশাদারের ভিত্তি তৈরি করে। পুরনো ধারণাকে ভেঙে নতুনত্বের দিকে এগিয়ে যাওয়ার মাধ্যমেই এই শিল্পে সত্যিকারের সফলতা অর্জন করা সম্ভব। মনে রাখবেন, শেখা বন্ধ করলে আপনার অগ্রগতিও থেমে যাবে। তাই ক্রমাগত শিখুন, নিজেকে আপগ্রেড করুন, আর এই উত্তেজনাপূর্ণ জগতে নিজের একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলুন।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ) 📖

প্র: এখনকার দিনে পর্যটন শিল্পে শুধু ভ্রমণ গাইড বা হোটেল ম্যানেজারের চিরাচরিত কাজগুলো ছাড়াও আর কী কী নতুন আর আকর্ষণীয় সুযোগ তৈরি হচ্ছে?

উ: আরে বাহ! এটা তো দারুণ একটা প্রশ্ন, যা আজকাল অনেকের মনেই ঘুরপাক খাচ্ছে। সত্যি বলতে কি, আমাদের চারপাশের পৃথিবীটা যেমন পাল্টাচ্ছে, ঠিক তেমনই পাল্টে যাচ্ছে পর্যটন শিল্পের রূপরেখা। আমি যখন এই সেক্টরে প্রথম কাজ শুরু করি, তখন পরিস্থিতিটা অনেকটাই অন্যরকম ছিল। এখন আর শুধু গাইড বা হোটেল ম্যানেজারের গণ্ডির মধ্যে আটকে নেই এর ভবিষ্যৎ। আমার নিজের অভিজ্ঞতা বলে, এখন অসংখ্য নতুন দিগন্ত খুলে গেছে, যা আমাদের ধারণারও বাইরে। যেমন ধরুন, এখন টেকসই পর্যটন (Sustainable Tourism) নিয়ে প্রচুর কাজ হচ্ছে। অনেকেই এখন পরিবেশবান্ধব উপায়ে ঘুরতে পছন্দ করেন, তাই এই ক্ষেত্রে পরিবেশ পরামর্শদাতা বা ইকো-ট্যুরিজম প্ল্যানার হিসেবে দারুণ চাহিদা তৈরি হয়েছে। এছাড়া, ডিজিটাল মার্কেটিং তো এখন সবকিছুর প্রাণ। আপনি যদি ট্যুরিজমের জন্য কন্টেন্ট তৈরি করতে পারেন, সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইন চালাতে পারেন, অথবা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO) বোঝেন, তাহলে ব্লগার, ভ্লগার বা ডিজিটাল মার্কেটিং স্পেশালিস্ট হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন। আমি তো নিজের চোখেই দেখেছি, কীভাবে একটা ভালো ব্লগ পোস্ট বা একটা সুন্দর ভিডিও কয়েক দিনের মধ্যেই হাজার হাজার মানুষকে একটা নির্দিষ্ট গন্তব্যের প্রতি আকৃষ্ট করতে পারে। আবার, যারা ডেটা অ্যানালাইসিস বোঝেন, তারা পর্যটকদের রুচি, পছন্দ বা ভ্রমণের ধারা বিশ্লেষণ করে নতুন নতুন প্যাকেজ ডিজাইন করতে পারেন। কাস্টমাইজড ট্যুর বা ব্যক্তিগত রুচি অনুযায়ী ভ্রমণ পরিকল্পনা তৈরি করাও এখন একটা বড় ব্যাপার। এছাড়া ওয়েলনেস ট্যুরিজম, অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম, ফুড ট্যুরিজম – এমন অসংখ্য niche market তৈরি হয়েছে যেখানে সুনির্দিষ্ট দক্ষতা থাকলে আপনি খুব সহজেই নিজের জায়গা করে নিতে পারবেন। আসলে, এই শিল্প এখন সৃজনশীলতা আর নতুন ধারণাকে দু’হাত ভরে স্বাগত জানাচ্ছে।

প্র: আধুনিক প্রযুক্তি যেভাবে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে পর্যটন শিল্পে কী কী বড় পরিবর্তন আসছে এবং এই নতুন ধারায় টিকে থাকতে বা সফল হতে আমাদের কী কী বিশেষ দক্ষতা অর্জন করতে হবে?

উ: সত্যি বলতে কি, প্রযুক্তি এখন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। পর্যটন শিল্পেও এর প্রভাব বিশাল। আমি যখন প্রথম এই জগতে পা রাখি, তখন ইন্টারনেট এতটা সহজলভ্য ছিল না। মানুষ ট্র্যাভেল এজেন্টদের উপর বেশি নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু এখন?
এখন তো স্মার্টফোন হাতে নিয়েই পুরো পৃথিবীর খবর রাখা যায়, টিকিট বুক করা যায়, এমনকি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR) বা অগমেন্টেড রিয়েলিটি (AR) ব্যবহার করে ঘরে বসেই একটা জায়গার প্রাথমিক ধারণা নেওয়া যায়। এই যে Artificial Intelligence (AI) আর Big Data – এগুলো এখন পর্যটনকে আরও ব্যক্তিগত আর আকর্ষণীয় করে তুলছে। যেমন ধরুন, আপনার আগের ভ্রমণের তথ্য বিশ্লেষণ করে AI আপনাকে এমন জায়গার প্রস্তাব দিতে পারে যা আপনার সত্যিই ভালো লাগবে। আমার তো মনে হয়, এর ফলে ভ্রমণ অভিজ্ঞতা আরও মসৃণ আর আনন্দদায়ক হয়ে উঠেছে। এই নতুন পরিস্থিতিতে সফল হতে হলে আমাদের কিছু নির্দিষ্ট দক্ষতা অর্জন করাটা খুব জরুরি। প্রথমত, ডিজিটাল সাক্ষরতা (Digital Literacy) ছাড়া এখন এক পাও এগোনো কঠিন। বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, সোশ্যাল মিডিয়া টুলস, কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম – এগুলোর ব্যবহার ভালোভাবে জানতে হবে। দ্বিতীয়ত, ডেটা অ্যানালাইসিসের প্রাথমিক ধারণা থাকাটা খুব কাজে দেয়। এর মাধ্যমে আপনি গ্রাহকের চাহিদা বুঝতে পারবেন এবং সেই অনুযায়ী পরিষেবা তৈরি করতে পারবেন। তৃতীয়ত, কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্স ডিজাইন (Customer Experience Design) – একজন ভ্রমণকারী শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কী ধরনের অভিজ্ঞতা চাইছে, সেটা বুঝতে পারা এবং সেই অনুযায়ী সবকিছু সাজানো এখন খুব গুরুত্বপূর্ণ। চতুর্থত, Adaptability বা দ্রুত মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা। প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত পাল্টাচ্ছে, তাই শেখার প্রক্রিয়াটা কখনো থামানো যাবে না। আর হ্যাঁ, ভাষা শেখাটাও কিন্তু দারুণ কাজে দেয়। বিভিন্ন ভাষার পর্যটকদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারলে তাদের আস্থা অর্জন করা অনেক সহজ হয়। আমার নিজের অভিজ্ঞতা বলে, প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারলে এই সেক্টরে সফল হওয়াটা সময়ের ব্যাপার মাত্র।

প্র: ভবিষ্যতের পর্যটন শিল্পের জন্য সেরা শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ পদ্ধতি কোনটি? শুধু একটি ডিগ্রি থাকলেই কি এখন এই বিশাল প্রতিযোগিতামূলক বাজারে সফল হওয়া সম্ভব, নাকি আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে যা আমাদের জানতে হবে?

উ: এটা খুবই প্রাসঙ্গিক একটা প্রশ্ন, যা নিয়ে আজকাল অনেকেই মাথা ঘামান। আমার নিজের ধারণা, শুধু একটি প্রচলিত ডিগ্রি নিয়ে এখন এই দ্রুত পরিবর্তনশীল পর্যটন শিল্পে সফল হওয়াটা বেশ কঠিন। অবশ্যই, ট্যুরিজম বা হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের উপর একটি ভালো ডিগ্রি আপনার ভিত্তিকে মজবুত করে। কিন্তু শুধু এটাই যথেষ্ট নয়। আমি আমার ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে দেখেছি, ডিগ্রি থাকলেও অনেকে হাতে-কলমে কাজ করতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছে। এখন আসলে অভিজ্ঞতার পাশাপাশি দক্ষতারও ভীষণ প্রয়োজন। তাই আমি সবসময় বলি, formal education-এর পাশাপাশি হাতে-কলমে শেখার উপর জোর দিন। যেমন ধরুন, কোনো ট্যুর কোম্পানি বা হোটেলে ইন্টার্নশিপ করাটা আপনার জন্য সোনার খনি হতে পারে। এখানে আপনি সরাসরি অভিজ্ঞতা পাবেন, যা কোনো বই পড়ে শেখা সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত, সার্টিফিকেট কোর্স। ডিজিটাল মার্কেটিং, ডেটা অ্যানালাইসিস, সাসটেইনেবল ট্যুরিজম – এমন বিভিন্ন বিষয়ের উপর শর্ট টার্ম কোর্সগুলো আপনার দক্ষতাকে আরও শাণিত করবে। তৃতীয়ত, Soft Skills-এর গুরুত্ব এখন অপরিসীম। যোগাযোগ দক্ষতা (Communication Skills), সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা (Problem-Solving), নেতৃত্বগুণ (Leadership) এবং সবচেয়ে জরুরি হলো Adaptability বা দ্রুত মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা। কারণ, পর্যটন শিল্পে অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটতেই পারে, আর তখন দ্রুত সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়াটা জরুরি। চতুর্থত, নিজের নেটওয়ার্ক তৈরি করা। বিভিন্ন ইভেন্ট বা সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে এই শিল্পের পেশাদারদের সাথে পরিচিত হওয়া আপনার ভবিষ্যতের জন্য দারুণ সুযোগ এনে দিতে পারে। আমার তো মনে হয়, এই শিল্পে শেখার কোনো শেষ নেই। আপনাকে প্রতিনিয়ত নিজেকে আপডেটেড রাখতে হবে। ডিগ্রি একটা শুরু মাত্র, আসল খেলাটা শুরু হয় এর পর থেকে!

📚 তথ্যসূত্র


➤ 1. 관광 교육 – Wikipedia

– Wikipedia Encyclopedia
Advertisement